![](https://i0.wp.com/centralnewsbd.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png?ssl=1)
রংপুর শহরের বুকচিরে বয়ে চলা ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খাল অবশেষে পরিস্কার পরিচ্ছন্নকরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
শনিবার (১১ মে) সকালে শ্যামাসুন্দরী খাল পরিস্কার পরিচ্ছন্নকরণ ও জনসচেতনতা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন রংপুর সিটি কর্পোরেশন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
একযোগে খালের পাঁচ কিলোমিটার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার মধ্য দিয়ে শ্যামাসুন্দরী পুনরুজ্জীবন ও সচল রাখার কার্যক্রমে ১৫টি পয়েন্টে
স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠন বিডি ক্লিনের একহাজার সদস্যসহ সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা খাল অংশ নিয়েছেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র বলেন, পরিচ্ছন্নতার সুফল সম্পর্কে নগরবাসীকে বেশি করে সচেতন করতে সবাইকে যার যার জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। শ্যামাসুন্দরী খালের আশপাশে বসবাসরত নগরবাসীকে সচেতন হতে হবে। খাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের পর নতুন করে ময়লা ফেলা এবং পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য অবৈধ স্যুয়ারেজ সংযোগ প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত তদারকি কার্যক্রম চলমান থাকবে। প্রয়োজনে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনাসহ অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আমার নির্বাচনী ইশতেহারে গ্রিন সিটি এবং ক্লিন সিটি ছিল অন্যতম অ্যাজেন্ডা। সেটিকে পূরণ করার লক্ষ্যে শ্যামাসুন্দরী খালকে পুনরুজ্জীবিত করতে বর্তমান পরিষদ বদ্ধপরিকর। তারই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে কোভিড রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি প্রজেক্টের আওতায় শ্যামাসুন্দরী খালের ৫ কিলোমিটার (চেকপোস্ট হতে শাপলা চত্বর) ময়লাযুক্ত মাটি পুনঃখনন ও অপসারণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শ্যামাসুন্দরী কেবল রংপুর নয়, সমগ্র বাংলাদেশের জন্যই একটি বড় সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। শ্যামাসুন্দরী খালকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং সৌন্দর্যবর্ধনের যে প্রয়াস চলছে তার সফলতা এবং রংপুরের সকল নাগরিকের সহযোগিতা প্রয়োজন।
![](https://i0.wp.com/centralnewsbd.com/wp-content/uploads/2024/05/8a2c2281-1f1a-489c-a7db-2cc59695908f.jpg?resize=958%2C527&ssl=1)
এ সময় আগামী তিন মাসের মধ্যে শ্যামাসুন্দরী খাল খনন ও সংস্কারসহ আধুনিকায়নে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রজেক্ট ডিজাইন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করার জন্য চেষ্টা চলছে বলেও জানান মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
এসময় প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন। আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেন। রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান ও পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী।
প্রায় ১৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং স্থানভেদে ২৩ থেকে ৯০ ফুট প্রশস্ত এই খাল সিটি এলাকার উত্তর পশ্চিমে কেল্লাবন্দস্থ ঘাঘট নদী থেকে শুরু হয়ে নগরীর সব পাড়া-মহল্লার বুক চিরে ধাপ পাশারিপাড়া, কেরানীপাড়া, মুন্সীপাড়া, ইঞ্জিনিয়ারপাড়া, গোমস্তাপাড়া, সেনপাড়া, মুলাটোল, তেঁতুলতলা শাপলা চত্বর, নূরপুর, বৈরাগিপাড়া হয়ে মাহিগঞ্জ সাতমাথা রেলগেট এলাকায় কেডি ক্যানেল স্পর্শ করে খোকসা ঘাঘট নদীতে মিশেছে।
দীর্ঘদিন ধরে দখল আর দূষণে ভরা এই শ্যামাসুন্দরী খাল নগরবাসীর দুর্ভোগের অন্যতম একটি কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। পানি প্রবাহের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই উপচে পড়ে বাড়িঘর ডুবে যেত।
পরিস্কার পরিচ্ছন্নকরণ হলে ময়লা-
আবর্জনা ও মশার অভয়াশ্রম খ্যাত এই খাল অবশেষে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে নগরবাসীকে। সেইসঙ্গে সৌন্দর্য ফিরে পাচ্ছে শ্যামাসুন্দরী।
প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালটি ১৮৯০ সালে খনন করা হয়। স্থানীয়দের মতে, খালটি প্রথমে ৬০ থেকে ১০০ ফুট চওড়া হলেও এখন এটি সরু নালায় পরিণত হয়েছে। এর পানি কালো হয়ে গেছে। সঙ্গে তীব্র দুর্গন্ধ।
স্থানীয় ইতিহাসবিদদের মতে, ১৯ শতকের শেষের দিকে মশাবাহী ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাবের কারণে রংপুরে অনেক লোক মারা যায়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন রংপুরের মহারানী শ্যামাসুন্দরী। মৃত্যুর পর, তার ছেলে রাজা জানকী বল্লব মশার প্রজনন মোকাবিলায় রংপুর শহরে একটি খাল খননের উদ্যোগ নেন। খালটি খনন করে তার মায়ের নামে নামকরণ করেন। সেই থেকেই খালটি রংপুরে শ্যামাসুন্দরী খাল নামে পরিচিত।
এর জল ছিল স্বচ্ছ। নগরবাসী সেখানে গোসল করতেন। কিন্তু, খালটি এখন মশা উৎপাদনের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে। এমনকি খালটি এখন স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
Related