![](https://i0.wp.com/centralnewsbd.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png?ssl=1)
সূর্যের সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় ঘুরিয়ে সেই ফুল সূর্যের দিকেই মুখ করে থাকে। এই জন্যই নাম তার সূর্যমুখী? সূর্যমুখী দেখতে রূপময় নয় গুণেও অনন্য। সূর্যমুখীর বীজের তেল স্বাস্থ্যর জন্য অসাধারণ। অন্যান্য তেলবীজে যেসব ক্ষতিকারক উপাদান (বিশেষ করে কোলেস্টেরল) থাকে সূর্যমুখীতে তা নেই। বরং আরও উপকারী উপাদান ও পুষ্টিগুণ বিদ্যমান।
গ্রামীণ জনপদে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ দিনদিন বেড়ে চলছে। সূর্যমুখী ফুলে ফোটা এক ধরনের শুকনো দানা (বিচি) থেকে উৎপাদিত হয় সান ফ্লাওয়ার তেল, যা ভেজালমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত; যার চাহিদা সারাদেশে। এর দামও বেশ ভালো। পাশাপাশি সূর্যমুখী ফুলের উচ্ছিষ্ট থেকে বের হয় ‘খইল’ নামের এক ধরনের গরুর খাদ্য। বর্তমানে বাজারে ভোজ্য তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় প্রান্তিক কৃষকরা এখন সম্পূর্ণ বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী চাষাবাদ শুরু করেছেন। ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধী অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সূর্যমুখী ফুল চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সূর্যমুখী।
![](https://i0.wp.com/centralnewsbd.com/wp-content/uploads/2022/04/Rangpur-photo-by-Himel-1.jpg?resize=710%2C395&ssl=1)
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধী অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য সাধারণ তেলের চাইতে একটু আলাদা। কোলেস্টেরলমুক্ত ও প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় সূর্যমুখী তেল শরীরের দুর্বলতা, কার্যক্ষমতা বাড়াতে অনন্য ভূমিকা রাখে। রান্নার জন্য সয়াবিন তেলের চেয়ে সূর্যমুখী তেল দশগুণ বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ। সূর্যমুখী তেল শরীরের হাড় সুস্থ ও মজবুত করে। শরীরের ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও কপারের চাহিদা পূরণ করে। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ এই তেল শরীরের নানা রকম ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। সূর্যমুখী তেলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম মানসিক চাপ দূর করে। এককথায় সূর্যমুখী তেলে মানব দেহের মহাওষুধ হিসাবে ভূমিকা পালন করছে।
![](https://i0.wp.com/centralnewsbd.com/wp-content/uploads/2022/04/Rangpur-photo-by-Himel-3.jpg?resize=768%2C412&ssl=1)
চট্টগ্রামের কৃষি সমৃদ্ধ উপজেলা মিরসরাই। এ উপজলায় প্রায় সব ধরনের ফসল উৎপাদন হয়। নতুন করে উপজেলায় রবিশস্যের চাষাবাদে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ। প্রথমবারের মতো মিরসরাইয়ে কৃষি জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু হয়েছে। সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন প্রান্তিক কৃষকরা। এ অঞ্চলের মাটির গুণাগুণ, আবহাওয়া ও জলবায়ু সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী হওয়ায় এটির চাষাবাদ কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করে ও আগ্রহী করে তুলতে উপজেলার ২নং হিঙ্গুলী ইউনিয়নের পুর্ব হিঙ্গুলী গ্রামের জাহিদুল আজিজ নাহিদ।
আরও পড়ুন:
সূর্যমুখী একটি তেল ফসল। এটি স্থানীয়ভাবে উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবেও পরিচিত। ভোজ্য তেলের মধ্যে সূর্যমুখী শরীরের জন্য অত্যন্ত ভালো তেল। এটি শরীরের কোলোস্টেরল ঠিক রাখে। তাই সূর্যমুখীর চাষাবাদ কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে তৈলবীজ খামারে বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে এবার নাহিদ ১৮ শতক জমিতে পরীক্ষামূলক চাষ করা হয়েছে। মাঠ জুড়ে হলুদ ফুলের সমারহ। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসছে প্রচুর দর্শনার্থীরাও। অনেকেই আছেন ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি এটি চাষ করার পরামর্শ নিচ্ছেন।
এই ব্যাপারে মনিরুল ইসলাম বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যসুখী ফুল চাষে খরচ কম। এতে সার ওষুধ কম লাগে। তেমন পরিচর্যাও করতে হয় না। তা ছাড়া অন্যান্য তৈল বীজ যেমন সরিষার, তিল এর চেয়ে তেলও বেশি পাওয়া যায়।
তিনি আরো বলেন, পুষ্টি চাহিদা পূরণে সুর্যমূখী তেলের জন্য বিদেশ থেকে এর বীজ আমদানি করতে হয়। দেশে এর আবাদ করা গেলে বিদেশ থেকে এর আমদানী কমে যাবে। এটি নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৯০ থেকে ১শ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দু’বার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। প্রতি শতক জমিতে ৩ হাজার ৫শ থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক শতক জমির উৎপাদিত বীজ থেকে ৯ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, বেশি লাভজনক ফসল সূর্যমুখী। প্রথমবার কৃষকেরা সূর্যমূখী চাষ করে লাভবান হবেন বলে আশা করছি। এবার আমরা সূর্যমুখী চাষের জন্য কৃষকদের সার ও বীজ প্রণোদনা দিয়েছি। আগামীতে আরো বেশি পরিমাণে সূর্যমুখীর চাষ হবে বলে প্রত্যাশা করছি।’
অপরদিকে, রংপুর গংগাচড়া ও চট্টগ্রামের রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে ফুটন্ত সূর্যমুখী ফুল। যেন দিগন্তজুড়ে হাজারো ফুটন্ত ফুল চোখে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। আর এসব সূর্যমুখী বাগানে ছবি, সেলফি তুলতে নানা বয়সী ছেলে-মেয়েরা প্রায় প্রতিদিন ভিড় করছে। উৎসুক বিভিন্ন বয়সীদের কাছে এসব সূর্যমুখী ফুল শুধু সৌন্দর্য্যরে ডালপালা মনে হলেও বাস্তবে দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর একটি উপকরণ এই সূর্যমুখীর বাগান। সূর্যমুখী ফুলের শুকনো দানা (বিচি) থেকে উৎপাদিত হয় সান ফ্লাওয়ার তেল। পাশাপাশি এ সূর্যমুখী ফুলের উচ্ছিষ্ট থেকে বের হয় ‘খইল’ নামের এক ধরনের গরুর খাদ্য।
এ বাস্তবতায় রাউজানে কৃষকদের মাঝে ‘সূর্যমুখী’র আবাদে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। তুলনামূক লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এ চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন উপজেলার অসংখ্য সাধারণ কৃষক। এ কারণে এ বছর উপজেলায় আগের বছরের তুলনায় সূর্যমুখীর চাষাবাদ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলায় এবার ৩২ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। গত বছর হয়েছিল ১৫ হেক্টর জমিতে। ভবিষ্যতে চাষাবাদ শত হেক্টর জমি ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা করছে রাউজান কৃষি অফিস।
উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার কাজী আতিকুর রহমান চৌধুরী বলেন ‘সরকারের দেয়া প্রণোদনা, বীজ, সারসহ যাবতীয় সমর্থন দেয়ায় রাউজানে সূর্যমুখী চাষ বেড়েছে। তিনি বলেন- ‘রাউজানে বারি-৩, স্থানীয়, হাইব্রিডসহ তিন জাতে সূর্যমুখী চাষ হয়। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতি হেক্টর থেকে ৩ টন বা তিন হাজার কেজি সূর্যমুখীর দানা (বিচি) হয়।
পাশাপাশি গরুর খাদ্য ‘খইল’ও পাওয়া যায় সূর্যমুখী থেকে। যা বিক্রি হয় ২০ টাকা কেজিতে। মোট কথা, এ চাষে কৃষকের প্রতি কানিতে ৩৫ হাজার বা তার বেশি লাভ হয়।
Related